প্রস্রাবের সংক্রমণের জন্য কী খাবেন: সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং প্রতিকার

মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মূত্রনালীর ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে ঘটে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে এটি সকলের জন্যই খুবই অস্বস্তিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিরাময় করা সম্ভব।

এই ব্লগে, আমরা প্রস্রাবের সংক্রমণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নিচের যে আলোচ্য বিষয় পড়তে চান ক্লিক করুনঃ

প্রস্রাবের সংক্রমণের লক্ষণ

মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিকভাবে সনাক্ত না করা হলে এটি একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

১. প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ, কিন্তু অল্প পরিমাণে প্রস্রাব বের হওয়া।
৩. দুর্গন্ধযুক্ত বা মেঘলা প্রস্রাব।
৪. তলপেট বা পিঠের তলপেটে ব্যথা।
৫. জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা (যদি সংক্রমণ তীব্র হয়)।

প্রস্রাবের সংক্রমণ কেন হয়?

১. অপরিষ্কারতা: মূত্রনালীর পরিষ্কার না রাখা।
২. কম পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই বৃদ্ধি পায়।
৩. ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময়।

মূত্রনালীর সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত খাবার খাওয়া

সুস্থ থাকার জন্য এবং দ্রুত সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূত্রনালীর সংক্রমণের ক্ষেত্রে নীচে কিছু উপযুক্ত খাবারের তালিকা দেওয়া হল:

১. ক্র্যানবেরি জুস

ক্র্যানবেরির জুসে প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা মূত্রনালীর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।
• দিনে ১-২ গ্লাস পান করা উপকারী।
• চিনি ছাড়া ক্র্যানবেরি জুস বেছে নেওয়া ভালো।

২. পানি

মূত্রনালীর সংক্রমণের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৩. প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার

প্রোবায়োটিক খাবার অন্ত্র এবং মূত্রনালীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
• দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
• কেফির এবং কম্বুচা: এগুলিও প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস।

৪. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন সি প্রস্রাবে অ্যাসিডিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।
• লেবু, কমলা এবং আমলকি।
• প্রতিদিন একটি আমলকি খাওয়া উপকারী।

৫. রসুন

রসুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
• প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া ভালো।

৬. সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি শরীরকে ক্ষারীয় রাখে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
পালং শাক, ব্রকলি এবং লাউ।
• রান্না করার সময় খুব বেশি তেল এবং মশলা ব্যবহার করবেন না।

৭. মেথি বীজ এবং তুলসী পাতা

• মেথি বীজ এবং তুলসী পাতা মূত্রনালীর সংক্রমণের ঘরোয়া প্রতিকার।
• মেথি বীজ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সেই পানি পান করুন।
• দিনে দুবার তুলসী পাতার রস পান করুন।

৮. নারকেল জল

নারকেল জল প্রাকৃতিকভাবে মূত্রনালীর পথ পরিষ্কার রাখে।
• দিনে একবার নারকেল জল পান করা উপকারী।
• মূত্রনালীর সংক্রমণ থাকলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন


কিছু খাবার মূত্রনালীর সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

১. অতিরিক্ত মশলাদার খাবার: এটি মূত্রনালীর জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে তুলতে পারে।
২. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল: প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে পানিশূন্য করে।
৩. অতিরিক্ত লবণ: লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যা সংক্রমণকে আরও খারাপ করতে পারে।
৪. চিনি এবং মিষ্টি খাবার: অতিরিক্ত চিনি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

আরো পড়ুনঃ  ঘন ঘন প্রস্রাব করলে কী খাবেন

মূত্রনালীর সংক্রমণের জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন

খাবারের পাশাপাশি, কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ:

১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন: প্রতিবার প্রস্রাব করার সময় পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. পানিশূন্যতা এড়িয়ে চলুন: পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।
৩. প্রস্রাব আটকে রাখা এড়িয়ে চলুন: প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করলে অবিলম্বে প্রস্রাব করুন।
৪. সুতির পোশাক পরুন: গরম এবং আর্দ্র পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। তাই সুতির পোশাক বেছে নিন।
৫. মানসিক চাপ কমাতে: মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url