সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা ও ব্যাক্তিগত লোন

নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে লোন ব্যবস্থা আমাদের দেশে বেশ আলোচিত একটি বিষয়। সাধারনত বেসরকারি লোনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিতিমালা তাকলেও সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য লোন খুব সহজ। আজকের বিষয়টি মূলত যারা সরকারি চাকুরিজীবী তাদের জন্য। শুরু থেকে পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়লে জানতে পারবেন পুরো বিষয়টি। খুব সহজেই আজনাদের সামনে তুলে ধরবো পুরো বিষয়টি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

আলোচ্য বিষয়ঃ 

সরকারি চাকুরিজীবীদের লোন সুবিধা

বিভিন্ন এনজিও লোনের তুলনায় খুবই কম ইন্টারেস্টে সরকারি লোন প্রদান করা হয়। আর এটিই মূলত সরকারি লোনের প্রধান সুবিধার একটি। সরকারি নীতি অনুসারে জমিজমা ও বাসা কিনার ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ ঋণ দেওয়া হবে সরকারি চাকুরিজীবীদের। মাত্র ৯ শতাংশ সুদ অনুপাতে ঋণ সুবিধা পাবেন তারা এবং এর মেয়াদ দেওয়া হবে ২০ বছর। সবথেকে মজার বিষয় হলো ৫ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা নিজে পরিশোধ করবে এবং ৪ শতাংশ সুদের পরিমান সরকার থেকে ভর্তুকি অনুসারো লোন পরিশোধ দিয়ে থাকে। আরও একটি নতুন নীতিমালা অনুসারে ঋণগ্রহীতা যদি মারা যান বা অক্ষম হয়ে অবসরে গেলে, সেই প্রতিষ্ঠান মূল ঋণ ও সুদের অর্থ পরিপূর্ণ মাফ করবে। এর জন্য সরকার ৮ সদসস্যের একটি দল অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত সচিবের নিকট দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আসুন যেনে নিই কি কি বিষয়ের উপর কিভাবে সরকারি চাকুরিজীবীরা লোন সুবিধা পেতে পারেন। তার মোটামুটি কিছু স্ক্রিম নিয়ে আলোনা করা যাক।

সরকারি চাকুরিজীবীদের গৃহ ঋণ গেজেট

ঋণ ব্যবস্থার প্রাথমিক স্ক্রিম হলো গৃহঋণ গেজেট। ফ্ল্যাট কিনা বা বাসা তৈরীতে দেওয়া হয় এই লোন। এই নীতিমালা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মঞ্জুরী কমিশন এর শিক্ষক/কর্মচারীর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে গৃহ ঋণ প্রদান করা হয়। এই নীতিমালা ১ জানুয়ারি ২০২০ সাল হতে চালু করা হয়। এই নীতিমালা অনুসারে কিছু শর্ত বা বাধানিষেধ আছে। যেমন উক্ত ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে শিক্ষক/কর্মচারী হতে হবে। এই ঋণের জন্য সর্বশেষ বয়সসীমার হবে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার এক বছর পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তৃকি ছুটি ভোগের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত প্রদান করা হবে। কোন শিক্ষক/কর্মচারীর নামে যদি কোন মামলা বা অভিযোগ থাকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তদন্ত শুরু করলে তার নিশ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং মামলার চার্জশীট চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষক/কর্মচারী ঋণ গ্রহণ করতে পারবে না। এই ঋণ প্রাপ্তির কিছু শর্ত আছে যেমন-

১। এই নীতিমালা অনুসারে একজন আবেদনকারী দেশের যেকোন জায়গায় বাসা নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ নিতে পারবে।
২। বাড়ি নির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রে বাড়ির সকশা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৩। প্রস্তাবিত জমি ও বাসা/ফ্ল্যাট যেকোন দায় হতে মুক্ত থাকতে হবে।
৪। নির্মানকারি সংস্থার কর্তৃক ব্যাংক শাখায় আবেদনকারীর ১টি হিসাব থাকতে হবে। হিসাব অনুযায়ী ঋণগ্রহীতার বেতন/বাতা/টেনশন এবং বাসা নির্মান ক্রয়ের ঋণ বিতরণ ও কিস্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৫। বাসা কিনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেডি ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ দেওয়া হবে।

আরো পড়ুনঃ  দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা গুলো কি জানুন

সরকারি চাকুরিজীবীদের পার্সোনাল লোন

সকল সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী গৃহ ঋণ এর পাশাপাশি পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত লোনের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বরাবর দরখান্ত করতে পারেন। অগ্রনী, সোনালী, জনতা, রূপালী সহ মোটামুটি মাইক্রো ফিন্যান্সিয়াল কর্পোরেশন এর অধিনে পার্সোরনাল লোনের জন্য আবেদন করা যায়। গৃহ ঋণের মত পার্সোনাল লোনেও কিছু নীতিমালা আছে, যেমন- সোনালী ব্যাংক এর ক্ষেত্রে শর্তাবলি হচ্ছে:

১) স্থায়ী চাকুরি হতে হবে
২) প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকতে হবে
৩) সেলারি একাউন্ট থাকতে হবে
৪) একজন গ্যারান্টর লাগবে এবং সেই গ্যারান্টারের ও স্থায়ী চাকুরী ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকতে হবে।
৫) নীট সেলারির ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে

সরকারী, আধা-সরকারী, সকল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী, সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠিত ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, প্রতিষ্ঠিত এনজিও, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/ বহুজাতিক কোম্পানীতে চাকুরীরত এ দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নিবাসী কর্মকর্তাগণ এবং বেসরকারী ব্যাংক বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভূক্ত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং বিভিন্ন ডিপোজিট স্কীম/স্থায়ী আমানত রশিদ/ ওয়েজ আর্নাস ডেভেলপমেন্ট বন্ড/ আইসিবি ইউনিট সার্টিফিকেটধারীগণ পার্সোনাল ঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, যে সকল ব্যাংক এই ঋণ দেয় তার মোটামুটি সবগুলিই প্রায় একই রকম শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে।

ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক সরকারি চাকুরিজীবীদের লোন

সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য ইসলামী ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে। লোনের পরিমান নির্ভর করে আপনার স্যালারি কত তার ওপর। অন্য ব্যাংকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকে লোন প্রসেসটা একটু জটির বিধায় কেও কেও সামান্য সমস্যায় ভোগে। লোনে ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ শব্দটি ব্যবহার করে। ইসলামী ব্যাংকে লোন নিতে আপনার চাকুরির বয়স মিনিমাম ১ বছর হতে হবে। লোন এপ্লাই করতে বিগত ৫ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। ইসলামী ব্যাংকে লোনের জন্য আপনাকে নিন্মোক্ত বিষয় জানতে হবে-

১। লোন নিতে আপনাকে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংক এর যে কোন শাখায় যেতে হবে।
২। যে বিষয়ে লোন নিবেন তার বিস্তারিত আলোচনা তাদের সাথে করতে হবে।
৩। লোন নিতে আপনার জবের ডিটেইলস্ প্রমানপত্র সাথে নিতে হবে।
৪। আপনার এনআইডি, ছবি এবং ব্যাক্তিগত সকল প্রকার সনদ সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৫। আপনার স্যালারি ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) এর উপরে হলে ১০ লক্ষ টাকা লোন পাবেন অন্যথায় কম লোন পাবেন।

ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য লোন দিয়ে থাকে কিন্তু কোন পারসোন লোন দেয় না। ব্যাক্তিগত লোন শুধুমাত্র দুই খাতে নিতে পারবেন সেটা হলো, বাড়ি তৈরী এবং ব্যাবসার কাজে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী মর্গেজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট এমাউন্ট লোন পাবেন।

আরো পড়ুনঃ  চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জেনে নিন

সোনালী ব্যাংক সরকারি চাকুরিজীবী লোন

সোনালী ব্যাংক সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য বিভিন্ন স্কিমে লোন দিয়ে থাকে। স্কিমগুলো হলো যথাক্রমে- গৃহ নির্মাণ ঋণ, গৃহ ক্রয় ঋণ, ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ, বাসা সংস্কার ঋণ, ব্যাক্তিগত গাড়ি ক্রয় ঋণ, মোটরসাইকেল ক্রয় ঋণ, শিক্ষা ঋণ, বিদেশে পড়ানোর শিক্ষা ঋণ, বিবাহের ঋণ, চিকিৎসা ঋণ, ছুটি কাটানোর ঋণ, ব্যবসা ঋণ, কর্মসংস্থান ঋণ ইত্যাদি। অন্যান্য ব্যাংকের মত সোনালী ব্যাংকে ঋণ নিতে কিছু শর্ত প্রয়োজন। যেমন: ঋণের প্রক্রিয়া, ঋণগ্রহীতার রিস্ক ও ব্যাংকের নীতির উপর লোনের টাকার পরিমান নির্ভর করে থাকে। সুদের হার নির্ভর করে ঋণের ধরন ও ঋণের মেয়াদের উপর। মেয়াদ নির্ভর করে ঋণের ধরন অনুযায়ী এবং ঋণের পরিমাণ ঋণগ্রহীতার জামানতের উপর নির্ভর করে থাকে। ঋণ নেওয়ার পদ্ধতি অন্যান্ন সব ব্যাংকের মত একই প্রসেস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সহ আবেদন করতে হয়।

সরকারি লোনের কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য

সরকারি কর্মচারীগণ বিভিন্ন মেয়াদ ও বিভিন্ন খাতে লোন গ্রহণ করতে পারেন। এখন আপনাদের জানা দরকার দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রাপ্তির শর্ত, টাকার পরিমান ও কিস্তির পরিমান-

গৃহ নির্মাণ : ৩ বছরের স্যালারী অথবা এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা (১২০০০০) টাকা ১২০ কিস্তিতে
গৃহ মেরামত : ১৮ মাসের স্যালারী অথবা ষাট হাজার (৬০০০০) টাকা ৬০ কিস্তিতে
মোটরগাড়ী : এক বছরের বেতন অথবা ষাট হাজার (৬০০০০) টাকা ৬০ কিস্তিতে
মোটর সাইকেল: পয়ত্রিশ হাজার টাকা (৩৫০০০) টাকা ৬০ কিস্তিতে
মোটর সাইকেল: ত্রিশ হাজার টাকা (৩০০০০) টাকা ৩০ কিস্তিতে
কম্পিউটার: ছত্রিশ হাজার টাকা (৩৬০০০) টাকা ৬০ কিস্তিতে

উপসংহার

আশা করি আপনার আমাদের আজকে আর্টিকেল থেকে সরকারি চাকুরিজীবীরা কিভাবে লোন নিবেন এবং কোন ব্যাংকে কত টাকা, কত পরিমান ইন্টারেন্টে লোন এবং কোন কোন খাতে লোন পাবেন তার বেসিক ধারনা আপনার জানতে পেরেছেন। আজকের এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র যারা সরকারি চাকুরি করেন এবং ব্যাংক থেকে লোন নিবেন তার উপর ভিত্তি করে লেখা। আশা করি এখান থেকে অনেকেই উপকৃত হবেন। আর এটাই আমাদের চাওয়া। ধন্যবাদ সবাই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url